সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

ভাল নেই মহরন বেগম

0 Shares

স্টাফ রিপোর্টার:
ছোট্র শিশু মরিয়ম। বয়স এখন তার নয় মাস। মায়ের বুকের দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগে। বেলা তখন প্রায় দুপুর। মা মহরন বেগম রান্না ঘরে একটি পিড়িঁতে বসে খালি হাড়ি পাতিল নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে ঝিমুচ্ছে আর মাঝে মাঝে রান্না ঘরের ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক দিয়ে বারবার রাস্তার দিকে উঁকি মারছে। যেন কারো আসার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। কারন তার স্বামী আর কিশোর সন্তান প্রতিদিনের মত বাড়ির পাশে কচা নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করতে গেছে। তারা ফিরে এলেই রান্না শুরু করবেন তিনি। এমন সময় মা মহরন বেগম বাড়িতে একজন সংবাদ কর্মিকে ঢুকতে দেখে জোড়ে একটা নিশ^াস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এরপর ঐ সংবাদকর্মিকে বর্ষার পানিতে ভেজা স্যাতস্যাতে তার ঝুপড়ি ঘরে কোনমতে বসতে দিয়ে নিজের সংসারের দু:খ দুর্দশার কথা বলতে শুরু করলেন। কথার মাঝখানেই তার এক সন্তান ছোট বড় মিলিয়ে তিন চারটি পোমা মাছ নিয়ে হাজির হলেন দরজায় মায়ের সামনে। মা তখন জিজ্ঞেস করলেন বাজার কৈ ? ঘরেতো আইজগো রান্দোনের মত একটাও চাউল নাই। সন্তান তখন জবাব দিল গাঙ্গে এই কয়ডা পোমা ছাড়া আইজ আর মাছ পাই নাই। এ কি বেচমু কও! হেইপিন্নে বাড়ি লইয়া আইছি। সন্তানের এই উত্তরে তার যেন বলার মত কিছ্ইু নেই। মায়ের প্রত্যাশা ছিল নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে আনার পর তা বিক্রি করে দোকান থেকে সংসারের বাজার সদায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু মহরনের মত পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার খোলপটুয়া গ্রামের নদী সংলগ্ন এলাকার এ জেলে পরিবার গুলোর এমন দু:খ দূর্দশা আর হতাশার চিত্র প্রতিদিনের।
ছোট মেয়ে মরিয়ম পেটে আসার পর প্রথম দিকে নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তার। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে পয়সা খরচ করে দুরে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাতে না পারায় বাড়ির পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যেটুকু ফ্রি সেবা পেতেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে।
মহরনের দুই ছেলে আর দুই মেয়ে। বড় ছেলে নয়ন (১৮) আর মেঝ ছেলে মিরাজ (মিরাজ)। ক্লাস ফোর পর্যন্ত চলে তাদের দু’ভাইয়ের পড়াশুনা। সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকায় এরপর তাদের পড়াশুনা আর সামনের দিকে এগায়নি। সংসারের অভাবের ঘানি টানতে পিতার সাথে নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করার পেশায় যুক্ত হন এ কিশোর দুই ভাই। মহরনের তৃতীয় মেয়ে বৃস্টি (১৩) ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে। প্রাইভেট দেয়া কিংবা গাইড বই কিনে দিতে না পারায় তার পড়াশুনা ভাল চলছেনা। মাঝে মাঝে সহপাঠিদের কাছ থেকে দুএকদিনের জন্য গাইড বই ধার এনে পড়তে হয় তাকে।

মহরনের ২০ বছর আগে বিয়ে হলেও এক মুহুর্তের জন্যও অভাব অনটন যেন পিছু ছাড়েনি তার। সহায় সম্বল বলতে মাত্র দুই শতক জমিতে থাকা চালের ছাউনীতে পলিথিন টানানো ভাঙ্গাচোরা ঝুপড়ি ঘরে রোদ বৃস্টিতে ভিজে বছরের পর বছর কেটে গেছে তার জীবন। মহরন নিজে রাস্তায় মাটির কাজের একজন শ্রমীক। তবে ছোট মেয়েটি পেটে আসার পর আর কাজে যেতে পারেননি তিনি। সংসারের যা অবস্থা তাতে স্বামী-স্ত্রী আর চার সন্তান সহ তাদের ছয় সদস্যের পরিবারের দিন চলে এখন খেয়ে না খেয়ে।
তার স্বামী শাহজাহান আকনের নামে আগে জেলে কার্ড থাকায় খাদ্য সহায়তা পেতেন। কিন্তু এখনও সে নিয়মিত জেলে থাকা সত্তে¡ও গত ৫ বছর থেকে কোন খাদ্য সহায়তা পাননা। বিভিন্ন সময়ে দুর্যোগকালীন সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছেন এ পরিবারটি। ঘর উত্তোলনের জন্য আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সরকারি একটি ঘর পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি।
মহরন তার অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে সাংবাদিকদের জনান, স্বামী-স্ত্রী সহ ৪টি পোলা মাইয়া নিয়া খাইয়া না খাইয়া দিন কাডে মোর। গাঙ্গে মাছ নাই, তাই না খাইয়া দিন কাডাইতে হইতে আছে মোগো। ঘরটির অবস্থাও একদম বেহাল। কি করব ভেবে পাচ্ছিনা।
স্থানীয় মজিবর নামে এক বৃদ্ধ জানান, আমাদের এলাকার এ পরিবারটি চরম অসহায় অবস্থায় আছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: আবুল হোসেন জানান,অসহায় মহরন বেগম স্বামী সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। আগামীতে তাকে একটি সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়া যায় কিনা চেস্টা করে দেখব বলে তিনি জানান।
উপজেলা চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমান জানান, সরকার গরীব ও অসচ্ছল পরিবার গুলোকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগীতা করছেন। মহরন বেগমের মত এরকম অসহায় পরিবার গুলোর পাশে শেখ হাসিনার সরকার সবসময় আছে। সরকারি ভাবে এ্ই অসহায় পরিবারটিকে কিভাবে সহযোগীতা করা যায় সেটা দেখব বলে তিনি জানান।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap